Advertisement

BRAKING NEWS //‘সরকার ত্বকী হত্যার বিচারপ্রক্রিয়া শুরু করলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি’


ত্বকী হত্যার ১৪২ মাস উপলক্ষে আলোক প্রজ্বালন করে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট। আজ বুধবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে
ছবি: প্রথম আলো

 অন্তর্বর্তী সরকার ত্বকী হত্যার বিচারকাজ আবার শুরু করলেও তেমন অগ্রগতি হয়নি বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ত্বকীর বাবা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব রফিউর রাব্বি।
নারায়ণগঞ্জের মেধাবী শিক্ষার্থী তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী হত্যা ও বিচারহীনতার ১৪২ মাস উপলক্ষে আয়োজিত আলোক প্রজ্বালনে তিনি এ মন্তব্য করেন।
আজ বুধবার সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট ওই আলোক প্রজ্বালনের আয়োজন করে। এতে জোটের সভাপতি জিয়াউল ইসলাম সভাপতিত্ব করেন, সঞ্চালনা করেন জোটের সাধারণ সম্পাদক ধীমান সাহা।
ওই অনুষ্ঠানে রফিউর রাব্বি, খেলাঘর আসরের সাবেক সভাপতি রথীন চক্রবর্তী, সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চের সদস্যসচিব হালিম আজাদ, নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি মাহবুবুর রহমান, সাংস্কৃতিক জোটের উপদেষ্টা ভবানী শংকর রায়, গণসংহতি আন্দোলনের সমন্বয়কারী তরিকুল সুজন, কমিউনিস্ট পার্টির জেলা সভাপতি হাফিজুল ইসলাম, ন্যাপের সাধারণ সম্পাদক আওলাদ হোসেন, বাসদের সদস্যসচিব আবু নাইম খান, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি মাহমুদ হোসেন, সামাজিক সংগঠন সমমনার সাবেক সভাপতি দুলাল সাহা প্রমুখ বক্তব্য দেন।
রফিউর রাব্বি তাঁর বক্তব্যে বলেন, শেখ হাসিনা দেশে দুর্বৃত্ত, মাফিয়া ও গডফাদারদের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন। তাঁর নির্দেশে ১৪২ মাস ধরে ত্বকী হত্যার বিচার বন্ধ করে রাখা হয়েছে।
ওসমান পরিবার নারায়ণগঞ্জ থেকে পালিয়ে গেলেও তাদের দোসররা নারায়ণগঞ্জে বহাল তবিয়তে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে মন্তব্য করে রফিউর রাব্বি বলেন, ওসমান পরিবার হত্যা, চাঁদাবাজি, দখল, নৈরাজ্যের মধ্য দিয়ে নারায়ণগঞ্জে দুর্বিষহ পরিস্থিতি তৈরি করেছিল। আজ তারা পালিয়ে গেলেও নতুন দুর্বৃত্ত চক্র আবার নারায়ণগঞ্জে গডফাদার হতে মরিয়া হয়ে উঠেছে। এখন আবার দখল, চাঁদাবাজি, মামলা–বাণিজ্য শুরু হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনেও এখন নিয়োগ–বাণিজ্য শুরু হয়েছে। খোদ সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের পিএস ও সিইও পাঁচ-সাত লাখ টাকা নিয়ে লোক নিয়োগ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠছে।
রফিউর রাব্বি বলেন, গত ১৫ বছর হত্যা লুটপাটের সঙ্গে জড়িত থাকা ওসমানদের সহযোগী কেউই গ্রেপ্তার হননি। আইনের আওতায় আসেননি। শেখ হাসিনা দেশে বিচারব্যবস্থাকে যেভাবে ধ্বংস করে রেখেছে, তার উল্লেখযোগ্য কোনো পরিবর্তন হয়নি। তাহলে চব্বিশের এত মৃত্যু, এত আত্মদানের ফলাফল কী। শিক্ষার্থী–জনতার এ অভ্যুত্থানকে কোনোভাবেই ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। বক্তব্যে তিনি ত্বকী, সাগর-রুনী, তনুসহ নারায়ণগঞ্জের সব হত্যার বিচার দাবি করেন।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, আগে শেখ হাসিনা ছিলেন ত্বকী হত্যার বিচারের জন্য মূল বাধা। কিন্তু এখন বাধাটা কোথায়? সব বক্তা ত্বকী হত্যার নির্দেশদাতা শামীম ওসমানসহ তাঁর ছেলে অয়ন ওসমান, ভাতিজা আজমেরী ওসমান এবং সব ঘাতককে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানান।
উল্লেখ্য, ২০১৩ সালের ৬ মার্চ নগরীর শায়েস্তা খাঁ রোডের বাসা থেকে বের হওয়ার পর নিখোঁজ হয় তানভীর মুহাম্মদ ত্বকী। দুই দিন পর ৮ মার্চ শীতলক্ষ্যা নদীর কুমুদিনী খাল থেকে ত্বকীর লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ওই বছরের ১২ নভেম্বর আজমেরী ওসমানের সহযোগী সুলতান শওকত ভ্রমর আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে জানান, আজমেরী ওসমানের নেতৃত্বে ত্বকীকে অপহরণের পর হত্যা করা হয়। ২০১৪ সালের ৫ মার্চ মামলার তদন্তকারী সংস্থা র‌্যাব সংবাদ সম্মেলন করে জানায়, নারায়ণগঞ্জের ওসমান পরিবারের নির্দেশে তাদেরই টর্চার সেলে ১১ জন মিলে ত্বকীকে হত্যা করেছে। অচিরেই তারা অভিযোগপত্র আদালতে পেশ করবে। একই সময় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে ওসমান পরিবারের পাশে থাকার কথা বললে বিচারপ্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়।
ত্বকী হত্যার পর থেকে বিচার শুরু ও চিহ্নিত আসামিদের গ্রেপ্তারের দাবিতে প্রতি মাসের ৮ তারিখ আলোক প্রজ্বালনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করছে নারায়ণগঞ্জ সাংস্কৃতিক জোট ও সন্ত্রাস নির্মূল ত্বকী মঞ্চ।

Post a Comment

0 Comments